আহলা দরবার শরীফের প্রাণপুরুষ হযরত সৈয়দ এ, জেড, এম সেহাবউদ্দীন খালেদ (রহঃ)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী
আহলা দরবার শরীফের আধ্যাত্মিক সাধক, হায্তে রওয়া, মুশকিল কোশা, রুহুল আশেকীন, সুলতানুল মোনাজেরীন, হযরতুল আল্লামা শাহ্সুফী আবুল মোকারেম মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (রহঃ) প্রকাশ-নুরী বাবার ঔরসে তিনি ১৯৫১ সালের ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বোয়ালখালীস্থ আহ্লা দরবার শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। আহ্লা দরবার শরীফের গোড়াপত্তনকারী, কুতুবে জমান জনাব হযরত শাহ্সুফি মাওলানা কাজী আসাদ আলী (কঃ) তাঁর পিতামহ। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি নূরী বাবার চতুর্থ সন্তান এবং জেষ্ঠ্যপুত্র (প্রকাশ-বড় মিয়া)। শিক্ষা জীবনে তিনি নগরীর চন্দনপুরা দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে অসামান্য কৃতিত্বের সাথে কামিল ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ছাত্র জীবনের এক পর্যায়ে পিতার আধ্যাত্মিকতার আকর্ষণে তাঁর কাছে শিষ্যত্ব (বায়াত) গ্রহণ করেন। হযরত গোলামুর রহমান প্রকাশ-বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এঁর সুযোগ্য খলিফা এবং কুতুবে জমান জনাব হযরত শাহ্সুফি মাওলানা কাজী আসাদ আলী সাহেব কেব্লা (রহঃ) এঁর বংশের অন্যতম আধ্যাত্মিক সিদ্ধপুরুষ, বিশিষ্ট মোনাজের ও ত্বরিকত প্রচারক হযরত শাহ্সূফী মাওলানা আবুল মোকারেম মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম আল্-ক্বাদেরী, আল্-চিশ্তী সাহেব কেব্লা (রহঃ) ১৯৭৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর, ২৮ অগ্রহায়ণ ভোর ৬টা ২মিনিটে বেছাল প্রাপ্ত হন।
নুরীবাবা ওফাতের পূর্বে তিনি স্বীয় জ্যেষ্ঠপুত্র, আহ্লা দরবার শরীফের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আল্লামা সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ সেহাবউদ্দীন খালেদ সাহেব কেব্লাকে খেলাফত প্রদান করেন। পিতার বেছালের পর থেকে সাজ্জাদানশীন সেহাববাবা দরবারের ভক্ত-মুরীদদের নিকট আল্লাহ ও বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, জগতকুলের জন্য মহান স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ করুণা, সৃষ্টিকুল শিরোমণি, পাপী-তাপীর ত্রাণকর্তা, নবীকুল শ্রেষ্ঠ প্রিয় হাবিব রাসুল পাক হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর প্রেম ও আদর্শ শিক্ষা দিয়ে যান।
তিনি আল্লাহর দ্বীন ও তরিকতের খেদমতে নিজের জীবন সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে গেছেন। অলি-আল্লাহ ও মুরশিদের প্রতি ভক্তদেরকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও অনুশীলনের পথ দেখিয়ে গেছেন।
ঢাকায় জশ্নে জুলুস উদযাপন: আহ্লা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন থাকাকালীন সময়ে তিনি ১৯৮৩ সালে তরিকত্ ভিত্তিক সংগঠন আঞ্জুমানে আসাদীয়া নুরীয়া সেহাবীয়া ও খান্কায়ে ক্বাদেরীয়া চিশ্তিয়া নুরীয়া সেহাবীয়া প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালে রাজধানী ঢাকার বুকে ১২ রবিউল আউয়াল স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, র্যালীসহ জশ্নে জুলুস পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন করেন। নিজ এলাকায় ইসলামী শিক্ষা প্রচার করার জন্য ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আসাদীয়া নুরীয়া সেহাবীয়া দাখিল মাদ্রাসা। আঞ্জুমানে আসাদীয়া নুরীয়া সেহাবীয়ার উদ্যোগে আহ্লা দরবার শরীফ সংলগ্ন গ্রাম সমূহের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য সাহায্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, হেফজখানা ও এতিমখানা কমপ্লেক্স নির্মাণ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করে। জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মূল রাস্তা থেকে আহ্লা বাস স্টেশন হয়ে দরবার শরীফ পর্যন্ত সড়কের প্রভূত উন্নতি সাধন করে চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে দরবার শরীফ পর্যন্ত ‘আহ্লা দরবার শরীফ বাস সার্ভিস’ চালু করেন। বোয়ালখালীর শাকপুরায় আরাকান সড়ক সংলগ্ন স্থানে আহ্লা দরবার শরীফের তোরণ নির্মাণ করেন ২০০৪ সালে।
এলেম’র খনি সেহাববাবা: জীবদ্দশায় তিনি যেন সর্বদা ধ্যানে, জ্ঞানে আশেকদের জন্য ছায়া হয়ে থাকতেন। এক অসাধারণ অনলবর্ষি বক্তা ছিলেন তিনি। শ্রোতাদেরকে শ্রেণীকক্ষের অবুঝ শিক্ষার্থীদের মতো করে অতি সহজভাবে বোঝাতেন তিনি। শিক্ষকের ভূমিকায় নানা ভাষায় ব্যাকরণ এর মতো কঠিন বিষয় পানির মতো সহজ করে তিনি অনর্গল বলে যেতে পারতেন। ক্লান্তি কখনো তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডের বামরুণগ্রাদ হস্পিটাল থেকে কিডনী চিকিৎসা গ্রহণের পরপরই তিনি একাধিক মাহ্ফিলে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করে মূল্যবান বক্তব্য রেখে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন। তাঁর বর্ণনায় কোরআন হাদিসের বিভিন্ন দলিলাদি প্রদান ও অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে মানুষের মনে সত্য উপলব্ধি আরো দৃঢ়তর করতে সাহায্য করত। ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা সেহাবউদ্দিন খালেদ (রহঃ) ভক্ত-মুরীদদের সাথে আধ্যাত্মিক আলোচনায় মশগুল থাকতে পছন্দ করতেন।
এ-ক্ষেত্রে একটানা রাত্রি জাগরণেও তাঁর কোন অনীহা ছিলো না। আল্লাহ ও আল্লাহ্র রাসুল আহমদে মোজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা (দঃ), সাহাবাগণ, পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড়পীর মীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ), খাজায়ে খাজেগান হিন্দলওলী হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমেরী ছেন্জেরী (রহঃ) ও অসংখ্য প্রখ্যাত পীর-মাশায়েখদের কথা বলতেন এবং রূপক অর্থে অথবা সাধারণভাবে আধ্যাত্মিক জ্ঞান শিক্ষা ও উপদেশ দিতেন। ভক্তরা মুগ্ধ হয়ে তা শুনতেন। উপদেশবাণীর ফাঁকে ফাঁকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া এবং এর উত্তর প্রদান করা তাঁর এক স্বভাবজাত শৈলী ছিলো। তিনি মনেপ্রাণে চাইতেন, তিনি যা জানেন ভক্তরা যেন তা আয়ত্ব করে নিজ পরিবার-পরিজনকে তা বিতরণ করে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ছেমা মাহফিলের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিলো তাঁর। কোথাও আহমদে মোজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এর শানে আয়োজিত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) মাহ্ফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পূর্বেই ছেমা মাহ্ফিল হবে কী না জানতে চাইতেন। সেমা চলাকালীন সময়ে জজ্বা হালতে নিজে যেমন পরমানন্দে কাঁদতেন, তেমনি ভক্তদেরকেও কান্নার স্রোতে ভাসাতেন। ছেমা, ক্বেয়াম, দরুদ ও ওরশ শরীফের সমর্থনে বিভিন্ন যৌক্তিক দলিল ও প্রসঙ্গ উপস্থাপনে তার অসাধারণ মেধা ও স্মরণশক্তি ছিলো। তাঁর সহচার্যে এসে, তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করে অনেক বিপদগামী লোক সঠিক পথে ফিরে এসেছেন।
ওরশ শরীফের কর্মসূচি সমূহ: আহ্লা দরবার শরীফের পীরে কামেল মুর্শিদে বরহক, রাহ্নুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত্, ফানা-ফিল্লাহ, বাকা-বিল্লাহ, মোনাজের ও ইমামে আহ্লে সুন্নাত, হয্রতুল আল্লামা আলহাজ শাহ্সুফী সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ সেহাবউদ্দীন খালেদ আল্-ক্বাদেরী, আল্-চিশ্তী সাহেব কেব্লা (রহঃ) এঁর ৬ষ্ঠ পবিত্র বার্ষিক ওরশ শরীফ ২২ চৈত্র মোতাবেক ৫ এপ্রিল ২০১৭ বুধবার চট্টগ্রামের বোয়ালখালীস্থ আহ্লা দরবার শরীফে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশ বরেণ্য আলেম ওলামা, পীর মাশায়েক, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীনগণসহ অগণিত আশেক-ভক্তবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
ওরশ শরীফ পরিচালনা করবেন হযরত সৈয়দ এ. জেড. এম সেহাবউদ্দীন খালেদ আল্-ক্বাদেরী, আল্-চিশ্তী (রহঃ) সাহেব কেব্লার শাহ্জাদা আহ্লা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ আব্রার ইব্নে সেহাব আল্-ক্বাদেরী আল্-চিশ্তী (মা:জি:আ:)। ওরশ শরীফ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খতমে কোরআন পাক, হযরত নবী করীম (দঃ); সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এবং আউলিয়া কেরাম (রহঃ) এঁর রুহ মোবারকের ওপর ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহ্ফিল, সেমা মাহ্ফিল ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তির জন্যে মোনাজাত ও তাবারুক বিতরণ। এই পবিত্র ওরশ শরীফে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উপস্থিত হন ।
(সংগৃহীত)